অনলাইন ডেস্ক ::
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা ওই নেতাকে মারধর করে হল ছাড়া করে। বুধবার রাতে আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পল্লীকবি জসীম উদ্দীন হলে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় হল প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিন ছাত্রলীগের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সভাপতি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের অনুসারী।
ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা হলের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, হলের প্রথম ব্লকের পূর্ব পাশে ৪র্থ ও ৫ম তলায় ৩/৪ জন কর্মচারী তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন। রাত আড়াইটার দিকে হৈচৈ শুনে ওই শিক্ষার্থী তার কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি দেখেন, বিভিন্ন বর্ষের ৮/৯ জন শিক্ষার্থী কর্মচারীদের ওই পাশে যাচ্ছে। কর্মচারীদের বাসার উঠার সিড়িতে তারা বোরহান ও ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেন। ছাত্রীটি হলের এক কর্মচারীর মেয়ে। সেখান থেকে বোরহানকে আটক করে মারধর করতে করতে শিক্ষার্থীরা তাকে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসে। তারপর হলের সিনিয়ররা আসেন। তারা বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ভোর ৪টার দিকে বোরহান হল থেকে বের হয়ে যান। হলের ২ নম্বর ব্লকে থাকা অপর এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বোরহানকে ওই ছাত্রীর হাত ধরে টানতে দেখেন। যার কারণে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওইপাশে গিয়ে তাকে আটক করে। ওই শিক্ষার্থী বলেন, বোরহান প্রথম বর্ষ থেকে ওই ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতো। ছাত্রীটি এখন কলেজে অধ্যয়নরত আছেন। ওই শিক্ষার্থী দাবি করেন, প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে ছাত্রীটির সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পকে জড়ান বোরহান। তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক এখনও বর্তমান রয়েছে। যার কারণে মাঝে মাঝেই তিনি গভীর রাতে কর্মচারীদের ওই পাশে যেতেন। এটা হলের অনেক শিক্ষার্থীর দৃষ্টিগোচর হয়। কিছুদিন পূর্বে কর্মচারীদের ওই পাশ থেকে আপত্তিকর অবস্থায় প্রেমিক যুগলকে আটক করেছিল শিক্ষার্থীরা। এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন বলেন, ছাত্রীর পরীক্ষা থাকায় তার মা আমাকে কল দিয়ে বাসায় পড়াতে যেতে বলে। রাত সাড়ে ১১টায় ওই বাসায় যাই। পড়া শেষ হতে রাত ১টা বাজে। এরপর বাসা থেকে বের হতে চাইলে ছাত্রীর মা রাতে খেয়েছি কিনা জানতে চায়। খাই নি বললে, তিনি খাবার দেন। আমি খেয়ে ওয়াশরুমে হাত ধুয়ে নিজের কক্ষের দিকে আসতে চাইলে ওই ফ্লোরের সিড়ির গোড়ায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে আটক করে জেরা শুরু করে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে অতিথি কক্ষে আসি। ওই সময় শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে বলে জানান তিনি। বোরহান আরও বলেন, কিছুদিন পূর্বে রাত দেড়টার দিকে ওই শিক্ষার্থীদের একজন কর্মচারীদের বাসার পাশে আম গাছ থেকে আম পাড়তে আসে। তখন আমি ছাত্রীর বাসায় ছিলাম। কর্মচারীরা তাকে আম পাড়তে নিষেধ করে। তারপরও ছেলেটি আম পাড়তে চাইলে আমি তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলি। এরপর থেকে ছেলেটা আমাকে টার্গেট করে এবং আজকের ঘটনা ঘটায়। ওই ছেলের নাম কি জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেন নি। এত রাত পর্যন্ত পড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, পরীক্ষার কারণে এত রাত পর্যন্ত পড়াই। ছাত্রীর বাবার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, পরীক্ষায় সময় ছাত্রীর স্যাররা রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত পড়ান। আমি কিছুই বুঝতেছি না। পড়াতে এসে চলে যাওয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থী তাকে মারতে মারতে নিয়ে গেলো। এসময় সিড়ির গোড়ার লাইট বন্ধ ছিলো। এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে সাধারণ সম্পাদক শাহেদ বলেন, যেহেতু এটার তদন্ত চলছে। তাই তদন্তের পর বিষয়টি জানা যাবে। হল প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। ঘটনার বিষয়ে জানতে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহকে বারবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে ছেলে তাকে আটক করেছে বলে দাবি করছে তার সঙ্গে বোরহানের আগে থেকেই ঝামেলা ছিল। সুত্র : মানবজমিন
পাঠকের মতামত: